নামাজে দাঁড়িয়ে কখনও কি আপনার মনে হয়েছে যে আপনি কেবল শরীরটাকেই দাঁড় করিয়েছেন—আপনার মন যেন কোথাও দূরে চলে গেছে? কিংবা এমন মনে হয়েছে যে, সিজদায় কপাল ছুঁইয়ে থাকলেও অন্তর ভারমুক্ত হচ্ছে না?
আপনি নিজেকে হয়তো শাসনও করছেন, বলছেন, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ! আমি তো আমার রবের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।’ কিন্তু তবুও যেনো মনোযোগ ফিরছে না- সারাক্ষণ এমন আশংকা হচ্ছে মনে মনে।
সদকা করার ক্ষেত্রেও হয়ত একই অনুভূতি হচ্ছে আপনার। কোথাও সদকার সুযোগ পেলে আপনি হয়ত সামর্থ্যমতো দানও করলেন—কিন্তু টের পেলেন আপনার মনের ভেতরে এই সদকার প্রতি খুব একটা ভালোবাসা বা আবেগ তৈরি হলো না। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁর পথে ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মতো, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে এবং প্রত্যেক শীষে একশ শস্যদানা থাকে। (সুরা বাকারা: ২৬১)
সোমবার- বৃহস্পতিবারের নফল রোজাও এখন হয়ত আপনি রাখেন, কিন্তু রোজায় ক্ষুধা থাকলেও আধ্যাত্মিক আনন্দ যেন হারিয়ে গেছে।
এ এক অদ্ভুত অসুখ যা আমাদের ইবাদতের আনন্দ কেড়ে নেয়। আল্লাহ তাআলার সাথে আমাদের অন্তরের বন্ধন দুর্বল করে দেয়।
কিন্তু যদি বলি—এই স্থবিরতা আমাদের জন্য বরং এক বিরাট সুযোগ? যদি বলি, মরুভূমির প্রাণহীনতার মাঝে আমাদের এই ক্লান্তি, আমাদের একঘেয়েমি আমাদের জন্য মরুভূমির মাঝে এক সবুজ মরূদ্যান নিয়ে আসতে পারে, যেখানে আবার আমাদের নামাজে অশ্রু ঝরবে, রোজায় হৃদয় পরিশুদ্ধ হবে, জিকিরে অন্তর ভরে যাবে প্রশান্তিতে? বিশ্বাস করবেন?
কীভাবে আসবে মরুভূমির মাঝে সবুজ সেই উদ্দীপনার মরূদ্যান? সেটাই বলছি। এটা অনেকটা জিমনেশিয়ামে নিয়মিত ব্যায়াম করার মতো। শুরুতে আপনি দেখবেন আপনার ওজন কমে যাচ্ছে, শরীর বদলে যাচ্ছে—আপনি উৎসাহ পাচ্ছেন। কিছুদিন পর মনে হবে শরীরের যেনো আর উন্নতি হচ্ছে না, আপনি যা-ই করছেন শরীর ফিট হচ্ছেনা আর ওজনও কমছেনা। এটাকে বলে ‘প্ল্যাটু’। তখন আমরা কেউ কেউ হাল ছেড়ে দেই, আবার কেউ কেউ ধৈর্য ধরে, শক্তভাবে টিকে থাকি, কাজ চালিয়ে যেতে থাকি। প্রতিদিন কি পাচ্ছি সেদিকে নজর না দিয়ে আমরা দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল দেখার জন্য এই ‘প্ল্যাটু’ ভাঙ্গার জন্য ব্যায়াম করে যেতে থাকি। এবং এভাবে একাগ্রতার সাথে নিজেকে উৎসাহ দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ফলাফল পাই।
ইবাদতও তেমন। যদি এই একঘেয়েমির সময়টাতে ধৈর্য ধরে এগিয়ে যেতে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য পুরস্কার আছে স্বয়ং মহামহিম রবের পক্ষ থেকে।
কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, নিশ্চয়ই যারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, তারপর তার ওপর অবিচল থাকে, তাদের ওপর ফেরেশতামন্ডলী নাজিল হয় এবং বলে যে, তোমরা ভয় পেয়ো না ও চিন্তিত হয়ো না। তোমরা জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর, যার প্রতিশ্রুতি তোমাদের দেওয়া হয়েছিল। আমরা তোমাদের বন্ধু ইহকালে ও পরকালে। সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা তোমাদের মন চাইবে এবং সেখানে রয়েছে যা তোমরা দাবি করবে। এটা হবে ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালুর পক্ষ থেকে আপ্যায়ন। (সুরা হা-মীম সাজদা: ৩০-৩২)
এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, ইমান আনার পর আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে একজন মুমিনের উপর যত দায়িত্ব বর্তায়, তার মধ্যে একটি বড় দায়িত্ব হলো, পূর্ণ মানসিক শক্তি ও প্রশান্তির সঙ্গে দ্বীন ও শরীয়তের ওপর অটল-অবিচল থাকা। সময় যত সঙ্গীন হোক, ইচ্ছাশক্তিতে যতই ভাটা পড়ুক, পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক, কোনো অবস্থাতেই দ্বীনি অভ্যাসগুলো থেকে বিচ্যুত না হওয়া। এর নামই হলো ‘ইস্তেকামাত’। আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতে অবিচল থাকতে পারি, তাহলে মহান রব আমাদের ইবাদতের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেবেন, ইবাদতের প্রতি দরদ বাড়িয়ে দেবেন আর এভাবেই আমাদের একঘেয়েমির ওয়াসওয়াসাও দূর হবে ইনশাআল্লাহ।
ইবাদতে একঘেয়েমি দূর করার কিছু সুনির্দিষ্ট উপায়
১. ইবাদতে একঘেয়েমি বোধ করছেন এটা স্বীকার করুন: আপনি যখনই টের পাবেন আপনার ইবাদতে বিরক্তি আসছে, এটা স্বীকার করুন যে আপনি একঘেয়ে-বোধ করছেন। এটাকে অস্বীকার করলে সমস্যা আরও বাড়ে। বরং স্বীকার করলে আপনি নিজেকে সচেতন করতে পারবেন।
২. ইমান নবায়ন করুন: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বেশি বেশি বলো, কারণ ইমানও কাপড়ের মতো পুরোনো হয়ে যায়। (মুসনাদে আহমদ)
হৃদয়কে নতুন করে চিরসবুজ ইমানের দীপ্তি দিয়ে সাজাতে বেশি বেশি জিকির করুন। যে দোয়াগুলো আপনার পছন্দ সেগুলো যখনই মনে পড়বে পড়তে থাকুন। কোরআনের যে সুরাগুলো আপনার মুখস্থ আছে সেগুলো মনে মনে পড়বেন, সুরা ও দোয়ার অর্থগুলো মনে করবেন। আল্লাহর কালামের এই জিকির আপনাকে আল্লাহর স্মরণে সিক্ত করবে, আপনার ইমান নবায়ন করবে ইনশাআল্লাহ।
৩. ইবাদতে বৈচিত্র্য আনুন: নামাজে নতুন সুরা পড়ুন, অন্য মসজিদে যান কিংবা একেকদিন একেক ঘরের কোণে নতুন করে আপনার নামাজের আয়োজন করুন, নতুন পোশাক পরে নামাজে দাঁড়ান, নতুন নতুন দোয়া শিখুন, নামাজের সুরাগুলোর অর্থ দেখুন।
ফরজ ইবাদতগুলোর সাথে নতুন নতুন নফল ইবাদত জুড়ে নিতে পারেন যেমন, ফজরের নামাজ পড়ে মা-বাবার সাথে কথা বলা, জোহরের নামাজ পড়ে কিছু সদকা করা, ইত্যাদি। তাহলে দেখবেন আপনার কাছে ইবাদতের সময়গুলো আরও আকর্ষণীয় লাগবে, আপনি অপেক্ষায় থাকবেন।
৪. নফসকে চ্যালেঞ্জ দিন: যে দানটা অভ্যাসবশত করছেন, সেটাকে দ্বিগুণ করুন। অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। যে রোজা যান্ত্রিক হয়ে গেছে, সে রোজার বদলে দাউদের (আ.) রোজার মত একদিন পর পর রোজা রাখুন। নফসের অলসতা আর উদাসীনতা ভাঙতে কখনও কড়া পদক্ষেপ দরকার হয়। ভেতরে ভেতরে যে প্ররোচনা দিচ্ছে তাকে চ্যালেঞ্জ করুন নতুন নতুন ইবাদতের ত্যাগ দিয়ে। কোরআনের একটি বড় সুরা পছন্দ করে নিন, প্রাত্যহিক তিলাওয়াতের পাশাপাশি সেই সুরার অর্থ ও ব্যাখ্যা বিস্তারিত পড়ার সিদ্ধান্ত নিন।
৫. নতুন পরিবেশে ইবাদত করুন: কখনও রুটিনের পরিবর্তনই ইবাদতের স্বাদ ফিরিয়ে আনে। ভ্রমণে যান, শহরের ভেতরে হলেও নতুন কোনো জায়গায় যান, সেখানে নামাজ পড়ুন। পার্কে বসে কোরআন পড়ুন, জিকির বা দোয়া পড়ুন। নিজের জন্য সময় বের করুন, বসে প্রশান্তির সঙ্গে আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে ভাবুন, তার প্রতি কৃতজ্ঞ হোন। নতুন পরিচিত বন্ধু, আত্মীয়, সহকর্মী বা প্রতিবেশীদের সঙ্গে নামাজ পড়ুন।
৬. প্রচেষ্টায় বিরতি দেবেন না: আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, আর তুমি তোমার রবের ইবাদত করতে থাক মৃত্যু না আসা পর্যন্ত। (সুরা হিজর: ৯৯)
তাই একঘেয়েমি এলে থেমে যাবেন না। এটা সেই দেয়ালের মত যেটা দৌড়বিদরা দৌড়ের মাঝপথে পেরোয়। তারা থেমে গেলে গন্তব্যে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। বরং বারবার এই বাঁধার দেয়াল অতিক্রম করতে করতে একসময় দেয়ালটিকে আর বাঁধা মনে হবে না বরং বাঁধা পেরোনোর জন্য আপনি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবেন।
পরেরবার যখন ইবাদত ফিকে লাগবে, মনে রাখবেন—আপনি সেই পথে আছেন যেটি সব সত্যিকার মুমিন অতিক্রম করেছেন। আর হয়ত ঠিক এই একঘেয়েমির মাঝেই আল্লাহ আপনার হৃদয়কে নতুন স্বাদের জন্য প্রস্তুত করছেন, ইনশাআল্লাহ।
লেখক: মাহসীনা মমতাজ মারিয়া, ভাইস প্রিন্সিপাল, এভারোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল
আপনি নিজেকে হয়তো শাসনও করছেন, বলছেন, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ! আমি তো আমার রবের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।’ কিন্তু তবুও যেনো মনোযোগ ফিরছে না- সারাক্ষণ এমন আশংকা হচ্ছে মনে মনে।
সদকা করার ক্ষেত্রেও হয়ত একই অনুভূতি হচ্ছে আপনার। কোথাও সদকার সুযোগ পেলে আপনি হয়ত সামর্থ্যমতো দানও করলেন—কিন্তু টের পেলেন আপনার মনের ভেতরে এই সদকার প্রতি খুব একটা ভালোবাসা বা আবেগ তৈরি হলো না। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁর পথে ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মতো, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে এবং প্রত্যেক শীষে একশ শস্যদানা থাকে। (সুরা বাকারা: ২৬১)
সোমবার- বৃহস্পতিবারের নফল রোজাও এখন হয়ত আপনি রাখেন, কিন্তু রোজায় ক্ষুধা থাকলেও আধ্যাত্মিক আনন্দ যেন হারিয়ে গেছে।
এ এক অদ্ভুত অসুখ যা আমাদের ইবাদতের আনন্দ কেড়ে নেয়। আল্লাহ তাআলার সাথে আমাদের অন্তরের বন্ধন দুর্বল করে দেয়।
কিন্তু যদি বলি—এই স্থবিরতা আমাদের জন্য বরং এক বিরাট সুযোগ? যদি বলি, মরুভূমির প্রাণহীনতার মাঝে আমাদের এই ক্লান্তি, আমাদের একঘেয়েমি আমাদের জন্য মরুভূমির মাঝে এক সবুজ মরূদ্যান নিয়ে আসতে পারে, যেখানে আবার আমাদের নামাজে অশ্রু ঝরবে, রোজায় হৃদয় পরিশুদ্ধ হবে, জিকিরে অন্তর ভরে যাবে প্রশান্তিতে? বিশ্বাস করবেন?
কীভাবে আসবে মরুভূমির মাঝে সবুজ সেই উদ্দীপনার মরূদ্যান? সেটাই বলছি। এটা অনেকটা জিমনেশিয়ামে নিয়মিত ব্যায়াম করার মতো। শুরুতে আপনি দেখবেন আপনার ওজন কমে যাচ্ছে, শরীর বদলে যাচ্ছে—আপনি উৎসাহ পাচ্ছেন। কিছুদিন পর মনে হবে শরীরের যেনো আর উন্নতি হচ্ছে না, আপনি যা-ই করছেন শরীর ফিট হচ্ছেনা আর ওজনও কমছেনা। এটাকে বলে ‘প্ল্যাটু’। তখন আমরা কেউ কেউ হাল ছেড়ে দেই, আবার কেউ কেউ ধৈর্য ধরে, শক্তভাবে টিকে থাকি, কাজ চালিয়ে যেতে থাকি। প্রতিদিন কি পাচ্ছি সেদিকে নজর না দিয়ে আমরা দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল দেখার জন্য এই ‘প্ল্যাটু’ ভাঙ্গার জন্য ব্যায়াম করে যেতে থাকি। এবং এভাবে একাগ্রতার সাথে নিজেকে উৎসাহ দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ফলাফল পাই।
ইবাদতও তেমন। যদি এই একঘেয়েমির সময়টাতে ধৈর্য ধরে এগিয়ে যেতে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য পুরস্কার আছে স্বয়ং মহামহিম রবের পক্ষ থেকে।
কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, নিশ্চয়ই যারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, তারপর তার ওপর অবিচল থাকে, তাদের ওপর ফেরেশতামন্ডলী নাজিল হয় এবং বলে যে, তোমরা ভয় পেয়ো না ও চিন্তিত হয়ো না। তোমরা জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর, যার প্রতিশ্রুতি তোমাদের দেওয়া হয়েছিল। আমরা তোমাদের বন্ধু ইহকালে ও পরকালে। সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা তোমাদের মন চাইবে এবং সেখানে রয়েছে যা তোমরা দাবি করবে। এটা হবে ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালুর পক্ষ থেকে আপ্যায়ন। (সুরা হা-মীম সাজদা: ৩০-৩২)
এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, ইমান আনার পর আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে একজন মুমিনের উপর যত দায়িত্ব বর্তায়, তার মধ্যে একটি বড় দায়িত্ব হলো, পূর্ণ মানসিক শক্তি ও প্রশান্তির সঙ্গে দ্বীন ও শরীয়তের ওপর অটল-অবিচল থাকা। সময় যত সঙ্গীন হোক, ইচ্ছাশক্তিতে যতই ভাটা পড়ুক, পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক, কোনো অবস্থাতেই দ্বীনি অভ্যাসগুলো থেকে বিচ্যুত না হওয়া। এর নামই হলো ‘ইস্তেকামাত’। আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতে অবিচল থাকতে পারি, তাহলে মহান রব আমাদের ইবাদতের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেবেন, ইবাদতের প্রতি দরদ বাড়িয়ে দেবেন আর এভাবেই আমাদের একঘেয়েমির ওয়াসওয়াসাও দূর হবে ইনশাআল্লাহ।
ইবাদতে একঘেয়েমি দূর করার কিছু সুনির্দিষ্ট উপায়
১. ইবাদতে একঘেয়েমি বোধ করছেন এটা স্বীকার করুন: আপনি যখনই টের পাবেন আপনার ইবাদতে বিরক্তি আসছে, এটা স্বীকার করুন যে আপনি একঘেয়ে-বোধ করছেন। এটাকে অস্বীকার করলে সমস্যা আরও বাড়ে। বরং স্বীকার করলে আপনি নিজেকে সচেতন করতে পারবেন।
২. ইমান নবায়ন করুন: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বেশি বেশি বলো, কারণ ইমানও কাপড়ের মতো পুরোনো হয়ে যায়। (মুসনাদে আহমদ)
হৃদয়কে নতুন করে চিরসবুজ ইমানের দীপ্তি দিয়ে সাজাতে বেশি বেশি জিকির করুন। যে দোয়াগুলো আপনার পছন্দ সেগুলো যখনই মনে পড়বে পড়তে থাকুন। কোরআনের যে সুরাগুলো আপনার মুখস্থ আছে সেগুলো মনে মনে পড়বেন, সুরা ও দোয়ার অর্থগুলো মনে করবেন। আল্লাহর কালামের এই জিকির আপনাকে আল্লাহর স্মরণে সিক্ত করবে, আপনার ইমান নবায়ন করবে ইনশাআল্লাহ।
৩. ইবাদতে বৈচিত্র্য আনুন: নামাজে নতুন সুরা পড়ুন, অন্য মসজিদে যান কিংবা একেকদিন একেক ঘরের কোণে নতুন করে আপনার নামাজের আয়োজন করুন, নতুন পোশাক পরে নামাজে দাঁড়ান, নতুন নতুন দোয়া শিখুন, নামাজের সুরাগুলোর অর্থ দেখুন।
ফরজ ইবাদতগুলোর সাথে নতুন নতুন নফল ইবাদত জুড়ে নিতে পারেন যেমন, ফজরের নামাজ পড়ে মা-বাবার সাথে কথা বলা, জোহরের নামাজ পড়ে কিছু সদকা করা, ইত্যাদি। তাহলে দেখবেন আপনার কাছে ইবাদতের সময়গুলো আরও আকর্ষণীয় লাগবে, আপনি অপেক্ষায় থাকবেন।
৪. নফসকে চ্যালেঞ্জ দিন: যে দানটা অভ্যাসবশত করছেন, সেটাকে দ্বিগুণ করুন। অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। যে রোজা যান্ত্রিক হয়ে গেছে, সে রোজার বদলে দাউদের (আ.) রোজার মত একদিন পর পর রোজা রাখুন। নফসের অলসতা আর উদাসীনতা ভাঙতে কখনও কড়া পদক্ষেপ দরকার হয়। ভেতরে ভেতরে যে প্ররোচনা দিচ্ছে তাকে চ্যালেঞ্জ করুন নতুন নতুন ইবাদতের ত্যাগ দিয়ে। কোরআনের একটি বড় সুরা পছন্দ করে নিন, প্রাত্যহিক তিলাওয়াতের পাশাপাশি সেই সুরার অর্থ ও ব্যাখ্যা বিস্তারিত পড়ার সিদ্ধান্ত নিন।
৫. নতুন পরিবেশে ইবাদত করুন: কখনও রুটিনের পরিবর্তনই ইবাদতের স্বাদ ফিরিয়ে আনে। ভ্রমণে যান, শহরের ভেতরে হলেও নতুন কোনো জায়গায় যান, সেখানে নামাজ পড়ুন। পার্কে বসে কোরআন পড়ুন, জিকির বা দোয়া পড়ুন। নিজের জন্য সময় বের করুন, বসে প্রশান্তির সঙ্গে আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে ভাবুন, তার প্রতি কৃতজ্ঞ হোন। নতুন পরিচিত বন্ধু, আত্মীয়, সহকর্মী বা প্রতিবেশীদের সঙ্গে নামাজ পড়ুন।
৬. প্রচেষ্টায় বিরতি দেবেন না: আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, আর তুমি তোমার রবের ইবাদত করতে থাক মৃত্যু না আসা পর্যন্ত। (সুরা হিজর: ৯৯)
তাই একঘেয়েমি এলে থেমে যাবেন না। এটা সেই দেয়ালের মত যেটা দৌড়বিদরা দৌড়ের মাঝপথে পেরোয়। তারা থেমে গেলে গন্তব্যে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। বরং বারবার এই বাঁধার দেয়াল অতিক্রম করতে করতে একসময় দেয়ালটিকে আর বাঁধা মনে হবে না বরং বাঁধা পেরোনোর জন্য আপনি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবেন।
পরেরবার যখন ইবাদত ফিকে লাগবে, মনে রাখবেন—আপনি সেই পথে আছেন যেটি সব সত্যিকার মুমিন অতিক্রম করেছেন। আর হয়ত ঠিক এই একঘেয়েমির মাঝেই আল্লাহ আপনার হৃদয়কে নতুন স্বাদের জন্য প্রস্তুত করছেন, ইনশাআল্লাহ।
লেখক: মাহসীনা মমতাজ মারিয়া, ভাইস প্রিন্সিপাল, এভারোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল
ধর্ম ডেস্ক